ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে সরকারের সেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে জাতীয় সমাজসেবা দিবস ২০২১ পালিত হতে যাচ্ছে আজ শনিবার (২ জানুয়ারি)। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী দিবসটি পালন করা হবে।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে, সেবা ও সুযোগ প্রান্তজনে’। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নত জীবনযাপনের ব্যবস্থা করতে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, দিবসটি তারই বার্তা নিয়ে হাজির হয়। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে একটি আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে বলে বাণীতে প্রত্যাশা করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় দেশের দুঃস্থ, দরিদ্র, অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত, পশ্চাৎপদ ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের মানবসম্পদে পরিণত করে দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়ার মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রকৃত দরিদ্ররা যেন সরকারের এসব কর্মসূচির সুফল ভোগ করতে পারেন, সে বিষয়ে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে বলেন রাষ্ট্রপতি।
আবদুল হামিদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়। তিনি দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা জোরদারকরণকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন কল্যাণধর্মী কর্মসূচি গ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে সুদমুক্ত ঋণ কার্যক্রম প্রচলন করে বঙ্গবন্ধু দেশে ও সমসাময়িক বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার প্রতিবন্ধী, অসহায় ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলতে সামাজিক সুরক্ষাভুক্ত বিভিন্ন ভাতার হার ও পরিধি অব্যাহতভাবে সম্প্রসারণ করছে।
জাতির পিতার দেখানো পথ অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সবসময়ই দেশের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছে বলে বাণীতে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদেই বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা প্রচলন করার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অধিক্ষেত্র, বরাদ্দ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়িয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রান্তিক ও মূলধারা থেকে ছিটকে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার সংশ্লিষ্ট সব আইন সংশোধনের মাধ্যমে আধুনিক করেছে। প্রান্তিক মানুষদের কাছে সরকারির ভাতা ও আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দিতে প্রায় ৯০ লাখ মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতাভুক্ত নাগরিকদের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরির মাধ্যমে ই-পেমেন্টের মাধ্যমে তাদের কাছে সরাসরি অর্থ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি ক্ষুদ্রঋণ ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে দরিদ্র ও বিপন্ন ব্যক্তিদের আত্মকর্মসংস্থান ও এতিম শিশুদের প্রতিপালনের ব্যবস্থা করেছে সরকার। শিশুদের জন্য ২৪ ঘণ্টা চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ টোল-ফ্রি সেবা চালু করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমের আওতায় ক্যানসার, কিডনি, লিভার, সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কোটার অতিরিক্ত ভাতা দেওয়া হচ্ছে। সমাজকর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৩৬ লাখ প্রতিবন্ধীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা-থেরাপি এবং প্রায় ২৪ হাজার নাগরিককে সহায়ক উপকরণ দেওয়া হয়েছে। অটিজম রিসোর্স সেন্টারের মাধ্যমে কাউন্সেলিং দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে জাতীয় প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
চলমান করোনা মহামারিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদফতর, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গরীব, দুঃস্থ ও প্রতিবন্ধীদের দুর্যোগকালীন সহায়তা হিসেবে নগদ অর্থ ও খাদ্যপ্রদান অব্যাহত রাখায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিবাদন জানান প্রধানমন্ত্রী।
সমাজেসেবা অধিদফতরের বিভিন্ন কর্মসূচি দরিদ্র নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এবং বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নে সহায়ক হবে বলে আশাবাদ জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। তারা জাতীয় সমাজসেবা দিবসের সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করেন।
বাসস।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।